দীর্ঘ দুঃখরাত্রি যদি এক অতীতের প্রান্ততটে খেয়া তার শেষ করে থাকে, তবে নব বিস্ময়ের মাঝে বিশ্বজগতের শিশুলোকে জেগে ওঠে যেন সেই নূতন প্রভাতে জীবনের নূতন জিজ্ঞাসা। পুরাতন প্রশ্নগুলি উত্তর না পেয়ে অবাক্ বুদ্ধিরে যারা সদা ব্যঙ্গ করে, বালকের চিন্তাহীন লীলাচ্ছলে সহজ উত্তর তার পাই যেন মনে সহজ বিশ্বাসে-- যে বিশ্বাস আপনার মাঝে তৃপ্ত থাকে, করে না বিরোধ, আনন্দের স্পর্শ দিয়ে সত্যের প্রত্যয় দেয় এনে।
আমি হাল ছাড়লে তবে তুমি হাল ধরবে জানি যা হবার আপনি হবে মিছে এই টানাটানি। ছেড়ে দে দে গো ছেড়ে, নীরবে যা তুই হেরে, যেখানে আছিস বসে বসে থাক্ ভাগ্য মানি। আমার এই আলোগুলি নেবে আর জ্বালিয়ে তুলি, কেবলি তারি পিছে তা নিয়েই থাকি ভুলি। এবার এই আঁধারেতে রহিলাম আঁচল পেতে, যখনি খুশি তোমার নিয়ো সেই আসনখানি।
কূল থেকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে-- সাগর-মাঝে ভাসিয়ে দিলেম পালটি তুলে। যেখানে ওই কোকিল ডাকে ছায়াতলে-- সেখানে নয়। যেখানে ওই গ্রামের বধূ আসে জলে-- সেখানে নয়। যেখানে নীল মরণলীলা উঠছে দুলে সেখানে মোর গানের তরী দিলেম খুলে। এবার, বীণা, তোমায় আমায় আমরা একা। অন্ধকারে নাই বা কারে গেল দেখা। কুঞ্জবনের শাখা হতে যে ফুল তোলে সে ফুল এ নয়। বাতায়নের লতা হতে যে ফুল দোলে সে ফুল এ নয়। দিশাহারা আকাশভরা সুরের ফুলে সেই দিকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে।