আলোকে আসিয়া এরা লীলা করে যায়, আঁধারেতে চলে যায় বাহিরে। ভাবে মনে, বৃথা এই আসা আর যাওয়া, অর্থ কিছুই এর নাহি রে। কেন আসি, কেন হাসি, কেন আঁখিজলে ভাসি, কার কথা বলে যাই, কার গান গাহি রে-- অর্থ কিছুই তার নাহি রে। ওরে মন, আয় তুই সাজ ফেলে আয়, মিছে কী করিস নাট-বেদীতে। বুঝিতে চাহিস যদি বাহিরেতে আয়, খেলা ছেড়ে আয় খেলা দেখিতে। ওই দেখ্ নাটশালা পরিয়াছে দীপমালা, সকল রহস্য তুই চাস যদি ভেদিতে নিজে না ফিরিলে নাট-বেদীতে। নেমে এসে দূরে এসে দাঁড়াবি যখন-- দেখিবি কেবল, নাহি খুঁজিবি, এই হাসি-রোদনের মহানাটকের অর্থ তখন কিছু বুঝিবি। একের সহিত একে মিলাইয়া নিবি দেখে, বুঝে নিবি, বিধাতার সাথে নাহি যুঝিবি-- দেখিবি কেবল, নাহি খুঁজিবি।
আদর ক'রে মেয়ের নাম রেখেছে ক্যালিফর্নিয়া, গরম হল বিয়ের হাট ঐ মেয়েরই দর নিয়া। মহেশদাদা খুঁজিয়া গ্রামে গ্রামে পেয়েছে ছেলে ম্যাসাচুসেট্স্ নামে, শাশুড়ি বুড়ি ভীষণ খুশি নামজাদা সে বর নিয়া-- ভাটের দল চেঁচিয়ে মরে নামের গুণ বর্ণিয়া।
এ মোহ ক'দিন থাকে, এ মায়া মিলায়, কিছুত পারে না আর বাঁধিয়া রাখিতে। কোমল বাহুর ডোর ছিন্ন হয়ে যায়, মদিরা উথলে নাকো মদির আঁখিতে। কেহ কারে নাহি চিনে আঁধার নিশায়। ফুল ফোটা সাঙ্গ হলে গাহে না পাখিতে। কোথা সেই হাসিপ্রান্ত চুম্বনতৃষিত রাঙা পুষ্পটুকু যেন প্রস্ফুট অধর! কোথা কুসুমিত তনু পূর্ণবিকশিত, কম্পিত পুলকভরে, যৌবনকাতর! তখন কি মনে পড়ে সেই ব্যাকুলতা, সেই চিরপিপাসিত যৌবনের কথা, সেই প্রাণ পরিপূর্ণ মরণ-অনল-- মনে পড়ে হাসি আসে? চোখে আসে জল?