দেহে মনে সুপ্তি যবে করে ভর সহসা চৈতন্যলোকে আনে কল্পান্তর, জাগ্রত জগৎ চলে যায় মিথ্যার কোঠায়। তখন নিদ্রার শূন্য ভরি স্বপ্নসৃষ্টি শুরু হয়, ধ্রুব সত্য তারে মনে করি। সেও ভেঙে যায় যবে পুনর্বার জেগে উঠি অন্য এক ভবে; তখনি তাহারে সত্য বলি, নিশ্চিত স্বপ্নের রূপ অনিশ্চিতে কোথা যায় চলি। তাই ভাবি মনে যদি এ জীবন মোর গাঁথা থাকে মায়ার স্বপনে, মৃত্যুর আঘাতে জেগে উঠে অজিকার এ জগৎ অকস্মাৎ যায় টুটে, সব-কিছু অন্য-এক অর্থে দেখি-- চিত্ত মোর চমকিয়া সত্য বলি তারে জানিবে কি? সহসা কি উদিবে স্মরণে ইহাই জাগ্রত সত্য অন্যকালে ছিল তার মনে?
সুরলোকে নৃত্যের উৎসবে যদি ক্ষণকালতরে ক্লান্ত উর্বশীর তালভঙ্গ হয় দেবরাজ করে না মার্জনা। পূর্বার্জিত কীর্তি তার অভিসম্পাতের তলে হয় নির্বাসিত। আকস্মিক ত্রুটি মাত্র স্বর্গ কভু করে না স্বীকার। মানবের সভাঙ্গনে সেখানেও আছে জেগে স্বর্গের বিচার। তাই মোর কাব্যকলা রয়েছে কুণ্ঠিত তাপতপ্ত দিনান্তের অবসাদে; কী জানি শৈথিল্য যদি ঘটে তার পদক্ষেপতালে। খ্যাতিমুক্ত বাণী মোর মহেন্দ্রের পদতলে করি সমর্পণ যেন চলে যেতে পারি নিরাসক্তমনে বৈরাগী সে সূর্যাস্তের গেরুয়া আলোয়; নির্মম ভবিষ্য, জানি, অতর্কিতে দস্যুবৃত্তি করে কীর্তির সঞ্চয়ে-- আজি তার হয় হোক প্রথম সূচনা।