যখন ছিলেম পথেরই মাঝখানে মনটা ছিল কেবল চলার পানে বোধ হত তাই, কিছুই তো নাই কাছে-- পাবার জিনিস সামনে দূরে আছে। লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছব এই ঝোঁকে সমস্ত দিন চলেছি এক-রোখে। দিনের শেষে পথের অবসানে মুখ ফিরে আজ তাকাই পিছু-পানে। এখন দেখি পথের ধারে ধারে পাবার জিনিস ছিল সারে সারে-- সামনে ছিল যে দূর সুমধুর পিছনে আজ নেহারি সেই দূর।
ওরা যায়, এরা করে বাস; অন্ধকার উত্তর বাতাস বহিয়া কত-না হা-হুতাশ ধূলি আর মানুষের প্রাণ উড়াইয়া করিছে প্রয়াণ। আঁধারেতে রয়েছি বসিয়া; একই বায়ু যেতেছে শ্বসিয়া মানুষের মাথার উপরে, অরণ্যের পল্লবের স্তরে। যে থাকে সে গেলদের কয়, "অভাগা, কোথায় পেলি লয়। আর না শুনিবি তুই কথা, আর হেরিবি তরুলতা, চলেছিস মাটিতে মিশিতে, ঘুমাইতে আঁধার নিশীথে।' যে যায় সে এই বলে যায়, "তোদের কিছুই নাই হায়, অশ্রুজল সাক্ষী আছে তায়। সুখ যশ হেথা কোথা আছে সত্য যা তা মৃতদেরি কাছে। জীব, তোরা ছায়া, তোরা মৃত, আমরাই জীবন্ত প্রকৃত।'
বাদলবেলায় গৃহকোণে রেশমে পশমে জামা বোনে, নীরবে আমার লেখা শোনে, তাই সে আমার শোনামণি। প্রচলিত ডাক নয় এ যে দরদীর মুখে ওঠে বেজে, পন্ডিতে দেয় নাই মেজে-- প্রাণের ভাষাই এর খনি। সেও জানে আর জানি আমি এ মোর নেহাত পাগলামি-- ডাক শুনে কাজ যায় থামি, কঙ্কণ ওঠে কনকনি। সে হাসে, আমিও তাই হাসি-- জবাবে ঘটে না কোনো বাধা। অভিধান-বর্জিত ব'লে মানে আমাদের কাছে সাদা। কেহ নাহি জানে কোন্ খনে পশমের শিল্পের সাথে সুকুমার হাতের নাচনে নূতন নামের ধ্বনি গাঁথে শোনামণি, ওগো সুনয়নী।