লীলাময়ী নলিনী, চপলিনী নলিনী, শুধালে আদর করে ভালো সে কি বাসে মোরে, কচি দুটি হাত দিয়ে ধরে গলা জড়াইয়ে, হেসে হেসে একেবারে ঢলে পড়ে পাগলিনী! ভালো বাসে কি না, তবু বলিতে চাহে না কভু নিরদয়া নলিনী! যবে হৃদি তার কাছে, প্রেমের নিশ্বাস যাচে চায় সে এমন করে বিপাকে ফেলিতে মোরে, হাসে কত, কথা তবু কয় না! এমন নির্দোষ ধূর্ত চতুর সরল, ঘোমটা তুলিয়া চায় চাহনি চপল উজল অসিত-তারা-নয়না! অমনি চকিত এক হাসির ছটায় ললিত কপোলে তার গোলাপ ফুটায়, তখনি পলায় আর রয় না!
দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে এসেছে আমার দ্বারে; একমাত্র অস্ত্র তার দেখেছিনু কষ্টের বিকৃত ভান, ত্রাসের বিকট ভঙ্গি যত অন্ধকার ছলনার ভূমিকা তাহার। যতবার ভয়ের মুখোশ তার করেছি বিশ্বাস ততবার হয়েছে অনর্থ পরাজয়। এই হার-জিত খেলা, জীবনের মিথ্যা এ কুহক শিশুকাল হতে বিজড়িত পদে পদে এই বিভীষিকা, দুঃখের পরিহাসে ভরা। ভয়ের বিচিত্র চলচ্ছবি-- মৃত্যুর নিপুণ শিল্প বিকীর্ণ আঁধারে।
কালের প্রবল আবর্তে প্রতিহত ফেনপুঞ্জের মতো, আলোকে আঁধারে রঞ্জিত এই মায়া, অদেহ ধরিল কায়া। সত্তা আমার,জানি না, সে কোথা হতে হল উত্থিত নিত্যধাবিত স্রোতে। সহসা অভাবনীয় অদৃশ্য এক আরম্ভ-মাঝে কেন্দ্র রচিল স্বীয়। বিশ্বসত্তা মাঝখানে দিল উঁকি, এ কৌতুকের পশ্চাতে আছে জানি না কে কৌতুকী। ক্ষণিকারে নিয়ে অসীমের এই খেলা, নববিকাশের সাথে গেঁথে দেয় শেষ-বিনাশের হেলা, আলোকে কালের মৃদঙ্গ উঠে বেজে, গোপনে ক্ষণিকা দেখা দিতে আসে মুখ-ঢাকা বধূ সেজে, গলায় পরিয়া হার বুদ্বুদ্ মণিকার। সৃষ্টির মাঝে আসন করে সে লাভ, অনন্ত তারে অন্তসীমায় জানায় অবির্ভাব।