এ কথা মানিব আমি, এক হতে দুই কেমনে যে হতে পারে জানি না কিছুই। কেমনে যে কিছু হয়, কেহ হয় কেহ, কিছু থাকে কোনোরূপে, কারে বলে দেহ, কারে বলে আত্মা মন, বুঝিতে না পেরে চিরকাল নিরখিব বিশ্বজগতেরে নিস্তব্ধ নির্বাক্ চিত্তে। বাহিরে যাহার কিছুতে নারিব যেতে আদি অন্ত তার, অর্থ তার, তত্ত্ব তার, বুঝিব কেমনে নিমেষের তরে? এই শুধু জানি মনে সুন্দর সে, মহান সে, মহাভয়ংকর, বিচিত্র সে, অজ্ঞেয় সে, মম মনোহর। ইহা জানি, কিছুই না জানিয়া অজ্ঞাতে নিখিলের চিত্তস্রোত ধাইছে তোমাতে।
কেন চুপ করে আছি, কেন কথা নাই, শুধাইছ তাই। কথা দিয়ে ডেকে আনি যারে দেবতারে, বাহির দ্বারের কাছে এসে ফিরে যায় হেসে। মৌনের বিপুল শক্তিপাশে ধরা দিয়ে আপনে সে আসে আসে পরিপূর্ণতায় হৃদয়ের গভীর গুহায়। অধীর আহ্বানে রবাহূত প্রসাদের মূল্য হয় চ্যুত। স্বর্গ হতে বর, সেও আনে অসম্মান ভিক্ষার সমান। ক্ষুব্ধ বাণী যবে শান্ত হয়ে আসে দৈববাণী নামে সেই অবকাশে। নীরব আমার পূজা তাই, স্তবগান নাই; আর্দ্র স্বরে ঊর্ধ্বপানে চেয়ে নাহি ডাকে, স্তব্ধ হয়ে থাকে। হিমাদ্রিশিখরে নিত্য নীরবতা তার ব্যাপ্ত করি রহে চারি ধার; নির্লিপ্ত সে সুদূরতা বাক্যহীন বিশাল আহ্বান আকাশে আকাশে দেয় টান, মেঘপুঞ্জ কোথা থেকে অবারিত অভিষেকে অজস্র সহস্রধারে পুণ্য করে তারে। না-কওয়ার না-চাওয়ার সেই সাধনায় হয়ে লীন সার্থক শন্তিতে যাক দিন।