"সাত-আটটে সাতাশ," আমি বলেছিলাম বলে গুরুমশায় আমার 'পরে উঠল রাগে জ্বলে। মা গো, তুমি পাঁচ পয়সায় এবার রথের দিনে সেই যে রঙিন পুতুলখানি আপনি দিলে কিনে খাতার নিচে ছিল ঢাকা; দেখালে এক ছেলে, গুরুমশায় রেগেমেগে ভেঙে দিলেন ফেলে। বল্লেন, "তোর দিনরাত্তির কেবল যত খেলা। একটুও তোর মন বসে না পড়াশুনার বেলা!" মা গো, আমি জানাই কাকে? ওঁর কি গুরু আছে? আমি যদি নালিশ করি এক্খনি তাঁর কাছে? কোনোরকম খেলার পুতুল নেই কি, মা, ওঁর ঘরে সত্যি কি ওঁর একটুও মন নেই পুতুলের 'পরে? সকালসাঁজে তাদের নিয়ে করতে গিয়ে খেলা কোনো পড়ায় করেন নি কি কোনোরকম হেলা? ওঁর যদি সেই পুতুল নিয়ে ভাঙেন কেহ রাগে, বল দেখি, মা, ওঁর মনে তা কেমনতরো লাগে?
মনে আছে কার দেওয়া সেই ফুল? সে ফুল যদি শুকিয়ে গিয়ে থাকে তবে তারে সাজিয়ে রাখাই ভুল -- মিথ্যে কেন কাঁদিয়ে রাখ তাকে। ধুলায় তারি শান্তি তারি গতি, এই সমাদর কোরো তাহার প্রতি -- সময় যখন গেছে তখন তারে ভুলো একেবারে। মাঘের শেষে নাগকেশরের ফুলে আকাশে বয় মন-হারানো হাওয়া; বনের বক্ষ উঠেছে আজ দুলে, চামেলি ওই কার যেন পথ-চাওয়া। ছায়ায় ছায়ায় কাদের কানাকানি, চোখে-চোখে নীরব জানাজানি -- এ উৎসবে শুকনো ফুলের লাজ ঘুচিয়ে দিয়ো আজ। যদি-বা তার ফুরিয়ে থাকে বেলা, মনে জেনো দুঃখ তাহে নাই; করেছিল ক্ষণকালের খেলা, পেয়েছিল ক্ষণকালের ঠাঁই। অলকে সে কানের কাছে দুলি বলেছিল নীরব কথাগুলি, গন্ধ তাহার ফিরেছে পথ ভুলে তোমার এলোচুলে। সেই মাধুরী আজ কি হবে ফাঁকি। লুকিয়ে সে কি রয় নি কোনোখানে। কাহিনী তার থাকবে না আর বাকি কোনো স্বপ্নে, কোনো গন্ধে গানে? আরেক দিনের বনচ্ছায়ায় লিখা ফিরবে না কি তাহার মরীচিকা। অশ্রুতে তার আভাস দিবে নাকি আরেক দিনের আঁখি। নাহয় তাও লুপ্ত যদিই হয়, তার লাগি শোক সেও তো সেই পথে। এ জগতে সদাই ঘটে ক্ষয়, ক্ষতি তবু হয় না কোনোমতে। শুকিয়ে-পড়া পুষ্পদলের ধূলি এ ধরণী যায় যদি বা ভুলি -- সেই ধুলারই বিস্মরণের কোলে নতুন কুসুম দোলে।