জান না তো নির্ঝরিণী, আসিয়াছ কোথা হতে, কোথায় যে করিছ প্রয়াণ, মাতিয়া চলেছ তবু আপন আনন্দে পূর্ণ, আনন্দ করিছ সবে দান। বিজন-অরণ্য-ভূমি দেখিছে তোমার খেলা জুড়াইছে তাহার নয়ান। মেষ-শাবকের মতো তরুদের ছায়ে ছায়ে রচিয়াছ খেলিবার স্থান। গভীর ভাবনা কিছু আসে না তোমার কাছে, দিনরাত্রি গাও শুধু গান। বুঝি নরনারী মাঝে এমনি বিমল হিয়া আছে কেহ তোমারি সমান। চাহে না চাহে না তারা ধরণীর আড়ম্বর, সন্তোষে কাটাতে চায় প্রাণ, নিজের আনন্দ হতে আনন্দ বিতরে তারা গায় তারা বিশ্বের কল্যাণ।
পিয়র্সন কয়েক জোড়া সবুজরঙের বিদেশী পাখি আশ্রমে ছেড়ে দিয়েছিলেন । অনেক দিন তারা এখানে বাসা বেঁধে ছিল । আজকাল আর দেখতে পাই নে । আশা করি কোনো নালিশ নিয়ে তারা চলে যায় নি, কিম্বা এখানকার অন্য আশ্রমিক পশু-পাখির সঙ্গে বর্ণভেদ বা সুরের পার্থক্য নিয়ে তাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে নি । এনেছে কবে বিদেশী সখা বিদেশী পাখি আমার বনে, সকাল-সাঁঝে কুঞ্জমাঝে উঠিছে ডাকি সহজ মনে । অজানা এই সাগরপারে হল না তার গানের ক্ষতি । সবুজ তার ডানার আভা, চপল তার নাচের গতি । আমার দেশে যে-মেঘ এসে নীপবনের মরমে মেশে বিদেশী পাখি গীতালি দিয়ে মিতালি করে তাহার সনে । বটের ফলে আরতি তার , রয়েছে লোভ নিমের তরে, বনজামেরে চঞ্চু তার অচেনা ব"লে দোষী না করে । শরতে যবে শিশির বায়ে উচ্ছ্বসিত শিউলিবীথি, বাণীরে তার করে না ম্লান কুহেলিঘন পুরানো স্মৃতি । শালের ফুল-ফোটার বেলা মধুকাঙালী লোভীর মেলা, চিরমধুর বঁধুর মতো সে ফুল তার হৃদয় হরে । বেণুবনের আগের ডালে চটুল ফিঙা যখন নাচে পরদেশী এ পাখির সাথে পরানে তার ভেদ কি আছে । উষার ছোঁওয়া জাগায় ওরে ছাতিমশাখে পাতার কোলে, চোখের আগে যে ছবি জাগে মানে না তারে প্রবাস ব"লে । আলোতে সোনা,আকাশে নীলা, সেথা যে চিরজানারই লীলা, মায়ের ভাষা শোনে সেখানে শ্যামল ভাষা যেখানে গাছে ।