সে ছিল আরেক দিন এই তরী-'পরে, কন্ঠ তার পূর্ণ ছিল সুধাগীতিস্বরে। ছিল তার আঁখি দুটি ঘনপক্ষ্ণচ্ছায়, সজল মেঘের মতো ভরা করুণায়। কোমল হৃদয়খানি উদ্বেলিত সুখে, উচ্ছ্বসি উঠিত হাসি সরল কৌতুকে। পাশে বসি ব'লে যেত কলকণ্ঠকথা, কত কী কাহিনী তার কত আকুলতা! প্রত্যুষে আনন্দভরে হাসিয়া হাসিয়া প্রভাত-পাখির মতো জাগাত আসিয়া। স্নেহের দৌরাত্ম্য তার নির্ঝরের প্রায় আমারে ফেলিত ঘেরি বিচিত্র লীলায়। আজি সে অনন্ত বিশ্বে আছে কোন্খানে তাই ভাবিতেছি বসি সজলনয়ানে।
সতীলোকে বসি আছে কত পতিব্রতা, পুরাণে উজ্জ্বল আছে যাঁহাদের কথা। আরো আছে শত লক্ষ অজ্ঞাতনামিনী খ্যাতিহীনা কীর্তিহীনা কত-না কামিনী-- কেহ ছিল রাজসৌধে কেহ পর্ণঘরে, কেহ ছিল সোহাগিনী কেহ অনাদরে; শুধু প্রীতি ঢালি দিয়া মুছি লয়ে নাম চলিয়া এসেছে তারা ছাড়ি মর্তধাম। তারি মাঝে বসি আছে পতিতা রমণী মর্তে কলঙ্কিনী, স্বর্গে সতীশিরোমণি। হেরি তারে সতীগর্বে গরবিনী যত সাধ্বীগণ লাজে শির করে অবনত। তুমি কী জানিবে বার্তা, অন্তর্যামী যিনি তিনিই জানেন তার সতীত্বকাহিনী।