নিঝর মিশেছে তটিনীর সাথে তটিনী মিশেছে সাগর-'পরে, পবনের সাথে মিশিছে পবন চির-সুমধুর প্রণয়-ভরে! জগতে কেহই নাইকো একেলা, সকলি বিধির নিয়ম-গুণে, একের সহিত মিশিছে অপরে আমি বা কেন না তোমার সনে? দেখো, গিরি ওই চুমিছে আকাশে, ঢেউ-'পরে ঢেউ পড়িছে ঢলি, সে কুলবালারে কে বা না দোষিবে, ভাইটিরে যদি যায় সে ভুলি! রবি-কর দেখো চুমিছে ধরণী, শশি-কর চুমে সাগর জল, তুমি যদি মোরে না চুম', ললনা, এ-সব চুম্বনে কী তবে ফল?
মন যে দরিদ্র, তার তর্কের নৈপুণ্য আছে, ধনৈশ্বর্য নাইকো ভাষার। কল্পনাভান্ডার হতে তাই করে ধার বাক্য-অলংকার। কখন হৃদয় হয় সহসা উতলা-- তখন সাজিয়ে বলা আসে অগত্যাই; শুনে তাই কেন তুমি হেসে ওঠ, আধুনিকা প্রিয়ে, অত্যুক্তির অপবাদ দিয়ে। তোমার সম্মানে ভাষা আপনারে করে সুসজ্জিত, তারে তুমি বারে বারে পরিহাসে কোরো না লজ্জিত। তোমার আরতি-অর্ঘ্যে অত্যুক্তিবঞ্চিত ভাষা হেয়, অসত্যের মতো অশ্রদ্ধেয়। নাই তার আলো, তার চেয়ে মৌন ঢের ভালো। তব অঙ্গে অত্যুক্তি কি কর না বহন সন্ধ্যায় যখন দেখা দিতে আস। তখন যে হাসি হাস সে তো নহে মিতব্যয়ী প্রত্যহের মতো-- অতিরিক্ত মধু কিছু তার মধ্যে থাকে তো সংহত। সে হাসির অতিভাষা মোর বাক্যে ধরা দেবে নাই সে প্রত্যাশা। অলংকার যত পায় বাক্যগুলো তত হার মানে, তাই তার অস্থিরতা বাড়াবাড়ি ঠেকে তব কানে। কিন্তু, ওই আশমানি শাড়িখানি ও কি নহে অত্যুক্তির বাণী। তোমার দেহের সঙ্গে নীল গগনের ব্যঞ্জনা মিলায়ে দেয়, সে যে কোন্ অসীম মনের আপন ইঙ্গিত, সে যে অঙ্গের সংগীত। আমি তারে মনে জানি সত্যেরো অধিক। সোহাগবাণীরে মোর হেসে কেন বল কাল্পনিক।