সন্ধ্যাবেলা লাঠি কাঁখে বোঝা বহি শিরে নদীতীরে পল্লীবাসী ঘরে যায় ফিরে। শত শতাব্দীর পরে যদি কোনোমতে মন্ত্রবলে অতীতের মৃত্যুরাজ্য হতে এই চাষী দেখা দেয় হয়ে মূর্তিমান, এই লাঠি কাঁখে লয়ে, বিস্মিত নয়ান, চারি দিকে ঘিরি তারে অসীম জনতা কাড়াকাড়ি করি লবে তার প্রতি কথা। তার সুখদুঃখ যত, তার প্রেম স্নেহ, তার পাড়াপ্রতিবেশী, তার নিজ গেহ, তার খেত, তার গোরু, তার চাষ-বাস, শুনে শুনে কিছুতেই মিটিবে না আশ। আজি যার জীবনের কথা তুচ্ছতম সেদিন শুনাবে তাহা কবিত্বের সম।
বন্ধ হয়ে এল স্রোতের ধারা, শৈবালেতে আটক প'ল তরী। নৌকা-বাওয়া এবার করো সারা-- নাই রে হাওয়া, পাল নিয়ে কী করি। এখন তবে চলো নদীর তটে, গোধূলিতে আকাশ হল রাঙা। পশ্চিমেতে আঁকা আগুন-পটে বাব্লাবনে ওই দেখা যায় ডাঙা। ভেসো না আর, যেয়ো না আর ভেসে-- চলো এখন, যাবে যে দূরদেশে। এখন তোমায় তারার ক্ষীণালোকে চলতে হবে মাঠের পথে একা। গিরি কানন পড়বে কি আর চোখে, কুটিরগুলি যাবে কি আর দেখা। পিছন হতে দখিন-সমীরণে ফুলের গন্ধ আসবে আঁধার বেয়ে, অসময়ে হঠাৎ ক্ষণে ক্ষণে আবেশেতে দিবে হৃদয় ছেয়ে। চলো এবার, কোরো না আর দেরি-- মেঘের আভাস আকাশ-কোণে হেরি। হাটের সাথে ঘাটের সাথে আজি ব্যাবসা তোর বন্ধ হয়ে গেল। এখন ঘরে আয় রে ফিরে মাঝি, আঙিনাতে আসনখানি মেলো। ভুলে যা রে দিনের আনাগোনা, জ্বালতে হবে সারা রাতের আলো। শ্রান্ত ওরে, রেখে দে জাল-বোনা, গুটিয়ে ফেলো সকল মন্দ ভালো। ফিরিয়ে আনো ছড়িয়ে-পড়া মন-- সফল হোক সকল সমাপন।