তোমার যে ছায়া তুমি দিলে আরশিরে হাসিমুখ মেজে, সেইক্ষণে অবিকল সেই ছায়াটিরে ফিরে দিল সে যে। রাখিল না কিছু আর, স্ফটিক সে নির্বিকার আকাশের মতো-- সেথা আসে শশী রবি, যায় চলে, তার ছবি কোথা হয় গত। একদিন শুধু মোরে ছায়া দিয়ে, শেষে সমাপিলে খেলা আত্মভোলা বসন্তের উন্মত্ত নিমেষে শুক্ল সন্ধ্যাবেলা। সে ছায়া খেলারই ছলে নিয়েছিনু হিয়াতলে হেলাভরে হেসে, ভেবেছিনু চুপে চুপে ফিরে দিব ছায়ারূপে তোমারি উদ্দেশে। সে ছায়া তো ফিরিল না, সে আমার প্রাণে হল প্রাণবান। দেখি, ধরা পড়ে গেল কবে মোর গানে তোমার সে দান। যদিবা দেখিতে তারে পারিতে না চিনিবারে অয়ি এলোকেশী-- আমার পরান পেয়ে সে আজি তোমারো চেয়ে বহুগুণে বেশি। কেমনে জানিবে তুমি তারে সুর দিয়ে দিয়েছি মহিমা। প্রেমের অমৃতস্নানে সে যে, অয়ি প্রিয়ে, হারায়েছে সীমা। তোমার খেয়াল ত্যেজে পূজার গৌরবে সে যে পেয়েছে গৌরব। মর্তের স্বপন ভুলে অমরাবতীর ফুলে লভিল সৌরভ।
সেদিনে আপদ আমার যাবে কেটে পুলকে হৃদয় যেদিন পড়বে ফেটে। তখন তোমার গন্ধ তোমার মধু আপনি বাহির হবে বঁধু হে, তারে আমার ব'লে ছলে বলে কে বলো আর রাখবে এঁটে। আমারে নিখিল ভুবন দেখছে চেয়ে রাত্রিদিবা। আমি কি জানি নে তার অর্থ কী বা? তারা যে জানে আমার চিত্তকোষে অমৃতরূপ আছে বসে গো, তারেই প্রকাশ করি, আপনি মরি, তবে আমার দুঃখ মেটে।