নাম তার ভেলুরাম ধুনিচাঁদ শিরত্থ, ফাটা এক তম্বুরা কিনেছে সে নিরর্থ। সুরবোধ-সাধনায় ধুরপদে বাধা নাই, পাড়ার লোকেরা তাই হারিয়েছে ধীরত্ব-- অতি-ভালোমানুষেরও বুকে জাগে বীরত্ব॥
I THINK I shall stop startled if ever we meet after our next birth, walking in the light of a far-away world. I shall know those dark eyes then as morning stars, and yet feel that they have belonged to some unremembered evening sky of a former life. I shall know that the magic of your face is not all its own, but has stolen the passionate light that was in my eyes at some immemorial meeting, and then gathered from my love a mystery that has now forgotten its origin.
তিনটে কাঁচা আম পড়ে ছিল গাছতলায় চৈত্রমাসের সকালে মৃদু রোদ্দুরে। যখন-দেখলুম অস্থির ব্যগ্রতায় হাত গেল না কুড়িয়ে নিতে। তখন চা খেতে খেতে মনে ভাবলুম, বদল হয়েছে পালের হাওয়া পুব দিকের খেয়ার ঘাট ঝাপসা হয়ে এলে। সেদিন গেছে যেদিন দৈবে-পাওয়া দুটি-একটি কাঁচা আম ছিল আমার সোনার চাবি, খুলে দিত সমস্ত দিনের খুশির গোপন কুঠুরি; আজ সে তালা নেই, চাবিও লাগে না। গোড়াকার কথাটা বলি। আমার বয়সে এ বাড়িতে যেদিন প্রথম আসছে বউ পরের ঘর থেকে, সেদিন যে-মনটা ছিল নোঙর-ফেলা নৌকো বান ডেকে তাকে দিলে তোলপাড় করে। জীবনের বাঁধা বরাদ্দ ছাপিয়ে দিয়ে এল অদৃষ্টের বদান্যতা। পুরোনো ছেঁড়া আটপৌরে দিনরাত্রিগুলো খসে পড়ল সমস্ত বাড়িটা থেকে। কদিন তিনবেলা রোশনচৌকিতে চার দিকের প্রাত্যহিক ভাষা দিল বদলিয়ে; ঘরে ঘরে চলল আলোর গোলমাল ঝাড়ে লণ্ঠনে। অত্যন্ত পরিচিতের মাঝখানে ফুটে উঠল অত্যন্ত আশ্চর্য। কে এল রঙিন সাজে সজ্জায়, আলতা-পরা পায়ে পায়ে-- ইঙ্গিত করল যে, সে এই সংসারের পরিমিত দামের মানুষ নয়-- সেদিন সে ছিল একলা অতুলনীয়। বালকের দৃষ্টিতে এই প্রথম প্রকাশ পেল-- জগতে এমন কিছু যাকে দেখা যায় কিন্তু জানা যায় না। বাঁশি থামল, বাণী থামল না-- আমাদের বধূ রইল বিস্ময়ের অদৃশ্য রশ্মি দিয়ে ঘেরা। তার ভাব, তার আড়ি, তার খেলাধুলো ননদের সঙ্গে। অনেক সংকোচে অল্প একটু কাছে যেতে চাই, তার ডুরে শাড়িটি মনে ঘুরিয়ে দেয় আবর্ত; কিন্তু, ভ্রূকুটিতে বুঝতে দেরি হয় না, আমি ছেলেমানুষ, আমি মেয়ে নই, আমি অন্য জাতের। তার বয়স আমার চেয়ে দুই-এক মাসের বড়োই হবে বা ছোটোই হবে। তা হোক, কিন্তু এ কথা মানি, আমরা ভিন্ন মসলায় তৈরি। মন একান্তই চাইত, ওকে কিছু একটা দিয়ে সাঁকো বানিয়ে নিতে। একদিন এই হতভাগা কোথা থেকে পেল কতকগুলো রঙিন পুথি; ভাবলে, চমক লাগিয়ে দেবে। হেসে উঠল সে; বলল, "এগুলো নিয়ে করব কী।" ইতিহাসের উপেক্ষিত এই-সব ট্র্যাজেডি কোথাও দরদ পায় না, লজ্জার ভারে বালকের সমস্ত দিনরাত্রির দেয় মাথা হেঁট করে। কোন্ বিচারক বিচার করবে যে, মূল্য আছে সেই পুঁথিগুলোর। তবু এরই মধ্যে দেখা গেল, শস্তা খাজনা চলে এমন দাবিও আছে ওই উচ্চাসনার-- সেখানে ওর পিড়ে পাতা মাটির কাছে। ও ভালোবাসে কাঁচা আম খেতে শুল্পো শাক আর লঙ্কা দিয়ে মিশিয়ে। প্রসাদলাভের একটি ছোট্ট দরজা খোলা আছে আমার মতো ছেলে আর ছেলেমানুষের জন্যেও। গাছে চড়তে ছিল কড়া নিষেধ। হাওয়া দিলেই ছুটে যেতুম বাগানে, দৈবে যদি পাওয়া যেত একটিমাত্র ফল একটুখানি দুর্লভতার আড়াল থেকে, দেখতুম, সে কী শ্যামল, কী নিটোল, কী সুন্দর, প্রকৃতির সে কী আশ্চর্য দান। যে লোভী চিরে চিরে ওকে খায় সে দেখতে পায় নি ওর অপরূপ রূপ। একদিন শিলবৃষ্টির মধ্যে আম কুড়িয়ে এনেছিলুম; ও বলল, "কে বলেছে তোমাকে আনতে।" আমি বললুম, "কেউ না।" ঝুড়িসুদ্ধ মাটিতে ফেলে চলে গেলুম। আর-একদিন মৌমাছিতে আমাকে দিলে কামড়ে; সে বললে, "এমন করে ফল আনতে হবে না।" চুপ করে রইলুম। বয়স বেড়ে গেল। একদিন সোনার আংটি পেয়েছিলুম ওর কাছ থেকে; তাতে স্মরণীয় কিছু লেখাও ছিল। স্নান করতে সেটা পড়ে গেল গঙ্গার জলে-- খুঁজে পাই নি। এখনো কাঁচা আম পড়ছে খসে খসে গাছের তলায়, বছরের পর বছর। ওকে আর খুঁজে পাবার পথ নেই।