রাজা করে রণযাত্রা, বাজে ভেরি, বাজে করতাল-- কম্পমান বসুন্ধরা। মন্ত্রী ফেলি ষড়যন্ত্রজাল রাজ্যে রাজ্যে বাধায় জটিল গ্রন্থি। বাণিজ্যের স্রোত ধরণী বেষ্টন করে জোয়ার-ভাঁটায়। পণ্যপোত ধায় সিন্ধুপারে-পারে। বীরকীর্তিস্তম্ভ হয় গাঁথা লক্ষ লক্ষ মানবকঙ্কালস্তূপে, ঊর্ধ্বে তুলি মাথা চূড়া তার স্বর্গ-পানে হানে অট্টহাস। পণ্ডিতেরা-- আক্রমণ করে বারম্বার পুঁথির-প্রাচীর-ঘেরা দুর্ভেদ্য বিদ্যার দুর্গ। খ্যাতি তার ধায় দেশে দেশে। হেথা গ্রামপ্রান্তে নদী বহি চলে প্রান্তরের শেষে ক্লান্ত স্রোতে। তরীখানি তুলি লয়ে নববধূটিরে চলে দূর পল্লী-পানে। সূর্য অস্ত যায়। তীরে তীরে স্তব্ধ মাঠ। দুরুদুরু বালিকার হিয়া। অন্ধকারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা দেখা দেয় দিগন্তের ধারে।
কোলে ছিল সুরে-বাঁধা বীণা মনে ছিল বিচিত্র রাগিণী, মাঝখানে ছিঁড়ে যাবে তার সে কথা ভাবি নি। ওগো আজি প্রদীপ নিবাও, বন্ধ করো দ্বার-- সভা ভেঙে ফিরে চলে যাও হৃদয় আমার। তোমরা যা আশা করেছিলে নারিনু পুরাতে-- কে জানিত ছিঁড়ে যাবে তার গীত না ফুরাতে। ভেবেছিনু ঢেলে দিব মন, প্লাবন করিব দশদিশি-- পুষ্পগন্ধে আনন্দে মিশিয়া পূর্ণ হবে পূর্ণিমার নিশি। ভেবেছিনু ঘিরিয়া বসিবে তোমরা সকলে, গীতশেষে হেসে ভালোবেসে মালা দিবে গলে, শেষ করে যাব সব কথা সকল কাহিনী-- মাঝখানে ছিঁড়ে যাবে তার সে কথা ভাবি নি। আজি হতে সবে দয়া করে ভুলে যাও, ঘরে যাও চলে-- করিয়ো না মোরে অপরাধী মাঝখানে থামিলাম ব'লে। আমি চাহি আজি রজনীতে নীরব নির্জন ভূমিতলে ঘুমায়ে পড়িতে স্তব্ধ অচেতন-- খ্যাতিহীন শান্তি চাহি আমি স্নিগ্ধ অন্ধকার। সাঙ্গ না হইতে সব গান ছিন্ন হল তার।