তুমি আমার আপন, তুমি আছ আমার কাছে, এই কথাটি বলতে দাও হে বলতে দাও। তোমার মাঝে মোর জীবনের সব আনন্দ আছে, এই কথাটি বলতে দাও হে বলতে দাও। আমায় দাও সুধাময় সুর, আমার বাণী করো সুমধুর; আমার প্রিয়তম তুমি, এই কথাটি বলতে দাও হে বলতে দাও। এই নিখিল আকাশ ধরা এই যে তোমায় দিয়ে ভরা, আমার হৃদয় হতে এই কথাটি বলতে দাও হে বলতে দাও। দুখি জেনেই কাছে আস, ছোটো বলেই ভালোবাস, আমার ছোটো মুখে এই কথাটি বলতে দাও হে বলতে দাও।
কলছন্দে পূর্ণ তার প্রাণ-- নিত্য বহমান ভাষার কল্লোলে জাগাইয়া তোলে চারি ধারে প্রত্যহের জড়তারে; সংগীতে তরঙ্গ তুলি হাসিতে ফেনিল তার ছোটো দিনগুলি। আঁখি তার কথা কয়, বাহুভঙ্গি কত কথা বলে, চরণ যখন চলে কথা কয়ে যায়-- যে কথাটি অরণ্যের পাতায় পাতায়; যে কথাটি ঢেউ তোলে আশ্বিনে ধানের খেতে, প্রান্ত হতে প্রান্তে যায় চলে; যে কথাটি নিশীথতিমিরে, তারায় তারায় কাঁপে অধীর মির্মিরে; যে কথাটি মহুয়ার বনে মধুপগুঞ্জনে সারাবেলা উঠিছে চঞ্চলি-- নাম কি কাকলী।
নন্দগোপাল বুক ফুলিয়ে এসে বললে আমায় হেসে, "আমার সঙ্গে লড়াই ক'রে কখ্খনো কি পার, বারে বারেই হার।' আমি বললেম, "তাই বৈকি! মিথ্যে তোমার বড়াই, হোক দেখি তো লড়াই।' "আচ্ছা তবে দেখাই তোমায়' এই ব'লে সে যেমনি টানলে হাত দাদামশাই তখ্খনি চিৎপাত। সবাইকে সে আনলে ডেকে, চেঁচিয়ে নন্দ করলে বাড়ি মাত। বারে বারে শুধায় আমায়, "বলো তোমার হার হয়েছে না কি।' আমি কইলেম, "বলতে হবে তা কি।' ধুলোর যখন নিলেম শরণ প্রমাণ তখন রইল কি আর বাকি। এই কথা কি জান -- আমার কাছে নন্দগোপাল যখন হার মান আমারি সেই হার, লজ্জা সে আমার। ধুলোয় যেদিন পড়ব যেন এই জানি নিশ্চিত, তোমারি শেষ জিত।'