২০ জানুয়ারি, ১৯৪০  উদীচী [শান্তিনিকেতন]


 

৮ (rattire keno holo morji)


রাত্তিরে কেন হল মর্জি,

চুল কাটে চাঁদনির দর্জি।

চুমরিয়ে দিল তার জুলফি,

নাপিত আদায় করে full fee।

চাঁদনির রাঁধ্‌নি সে আসে যায়,

বঁড়শি-বেহালা থেকে বাসে যায়।

ভবুরাম ওর পাড়াপড়শী,

বেচে সে লাঠাই আর বঁড়শি।

আর বেচে যাত্রার বেয়ালা,

আর বেচে চা খাবার পেয়ালা।

চা খেয়ে সে দিল ঘুম তখুনি,

সইল না গিন্নির বকুনি।

কটকের নেত্ত মজুমদার,

সে বটে সুবিখ্যাত ঘুমদার।

কলু সিং দেয় তারে পাক্কা

তিন মণ ওজনের ধাক্কা।

হাই তুলে বলে, এ কী ঠাট্টা--

ঘড়িতে যে সবে সাড়ে-আটটা।

চৌকিদারের মেজো শালী সে

পড়ে থাকে মুখ গুঁজে বালিশে।

তাই দেখে গলাভাঙা পালোয়ান

বাজখাঁই সুরে বলে, আলো আন্‌।

নীচে থেকে বলে হেঁকে রহমৎ,

বাংলা জবানি তুমি কহো মৎ।

ও দিকে মাথায় বেঁধে তোয়ালে

ভিখুরাম নাচে তার গোয়ালে।

তোয়ালেটা পাদরির ভাইঝির,

মোজা-জোড়া খড়দার বাইজির।

পিরানের পাড়ে দেয় চুমকি,

ইরানেতে সেলাইয়ের ধুম কী।

বোগদাদে তাই যাবে আলাদিন

শাশুড়ি যতই ঘরে তালা দিন।

শাশুড়ির মুখঢাকা বুর্খায়,

পাছে তারে ঠেলা মারে গুর্খায়।

চুরি গেছে গুর্খার ভেঁপুটি,

এজলাসে চিন্তিত ডেপুটি।

ডেপুটির জুতো মোড়া সাটিনেই,

কোনোখানে দাঁতনের কাঠি নেই।

দাঁতনের খোঁজে লাগে খটকা,

পেয়াদা ঘি আনে তিন মটকা।

গাওয়া ঘি সে নয়, সে-যে ভরসা--

সের-করা দাম পাঁচ পয়সা।

বাবু বলে, দাম খুব জেয়াদা,

কাজে ইস্তফা দিল পেয়াদা।

উমেদার এল আজ পয়লা

গোয়াড়ির যত গোড়ো গয়লা।

পয়লার ঘরে হাঁড়ি চড়ে না,

পদ্মরে ছেড়ে খাঁদু নড়ে না।

পদ্ম সেদিন মহা বিব্রত,

বুধবারে ছিল তার কী ব্রত।

ভাশুর পড়ল এসে সুমুখে,

দুধ খেয়ে নিল এক চুমুকে।

চেপে এল লজ্জা শরমটা,

টেনে দিল দেড়-হাত ঘোমটা।

চুঁচড়োয় বাড়ি হরিমোহনের,

গঙ্গায় স্নানে গেছে গ্রহণের।

সঙ্গে নিয়েছে চার গণ্ডা

বেছে বেছে পালোয়ান ষণ্ডা।

তাল ঠোকে রামধন মুন্সি,

কোমরেতে তিন পাক ঘুন্সি।

দিদি বলে,মুখ তোর ফ্যাকাশে,

ভালো করে ডাক্তার দেখাসে।

বলে ওঠে তিনকড়ি পোদ্দার,

আগে তুই উকিলের শোধ্‌ ধার।

ভিখু শুনে কেঁদে চোখ রগড়ায়,

একদম  চলে গেল মগরায়।

মগরায় খুদি নিয়ে খুঞ্চে

খেজুরের আঁটিগুলো গুনছে--

যেই হল তিন-কুড়ি পাঁচটা,

দেখে নিল উনুনের আঁচটা।

ননদের ঘরে ক'রে ঘি চুরি

তখনি চড়িয়ে দিল খিচুড়ি।

হল না তো চালে ডালে মেলানো,

মুশকিল হবে ওটা গেলানো।

সাড়া পায় মাছওয়ালা মিন্সের;

বলে, পাকা রুই চাই তিন সের।

বনমালী মাছ আনে গামছায়;

বলে, ও যে এক্ষুনি দাম চায়।

আচ্ছা, সে দেখা যাবে কালকে--

ব'লেই সে চলে গেল শালকে।

মুন্সি যখন লেখে তৌজি,

জলে নামে শালকের বউ ঝি।

শাল্‌কের ঘাটে ভাঙা পাল্কি;

কালু যাবে বানিচঙে কাল কি।

বানিচঙে ঢেঁকি পাকা-গাঁথ্‌নি,

ধান কাটে কালুদার নাৎনি।

বানিচঙ কোন্‌ দেশে কোন্‌ গাঁয়,

কে জানে সে যশোরে কি বনগাঁয়।

ফুটবলে বনগাঁর মোক্তার

যত হারে, তত বাড়ে রোখ তার।

তার ছেলে হরেরাম মিত্তির,

আঁক ক'সে ব্যামো হল পিত্তির।

মুখ চোখ হয়ে গেল হলদে,

ওরে ওকে পলতার ঝোল দে।

পলতা কিনতে গেল ধুবড়ি,

কিনল গুগলি এক-চুবড়ি।

হুগলির গুগলি কী মাগ্‌গি,

ভাঙা হাটে পাওয়া গেল ভাগ্যি।

ধুবড়িতে মানকচু সস্তা,

ফাউ পেল কাগজ দু বস্তা।

দেখে বলে নীলমণি সরকার--

কাগজে হরুর খুব দরকার;

জ্যামিতি অতীত তার সাধ্যর,

যতই করুন তারে মারধোর।

কাগজে বসিয়ে রেখে নারকেল

পেন্সিলে কাটে ব'সে সার্‌কেল।

সার্‌কেল কাটতে সে কী বুঝে

খামকাই ঠেকে গেল ত্রিভুজে।

সইতে পারে না তার চাপুনি,

পালাজ্বরে দিল তারে কাঁপুনি।

শ্রাদ্ধবাড়িতে লেগে ঠাণ্ডা

হেঁচে মরে ত্রিবেণীর পাণ্ডা।

অবেলায় খেতে বসে দারোগা,

শির শির ক'রে ওঠে তারো গা।

টাট্টু ঘোড়ার এক গাড়িতে

ডাক্তার এল তার বাড়িতে।

সে-ঘোড়াটা বেড়া ভাঙে নন্দর,

চিহ্ন রাখে না খেত-খন্দর।

নন্দ বিকেলে গেল হাবড়ায়,

সারি সারি গাড়ি দেখে ঘাবড়ায়।

গোনে ব'সে, তিন চার পাঁচ সাত,

আউড়িয়ে যায় সারা ধারাপাত।

গুনে গুনে পারে না যে থামতে,

গল্‌গল্‌ ক'রে থাকে ঘামতে।

নয় দশ বারো তেরো চোদ্দ,

মনে পড়ে পয়ারের পদ্য।

কাশীরাম দাসে আনে পুণ্য,

দশে আর বিশে লাগে শূন্য।

"কাশীরম কাশীরাম' বোল দেয়,

সারাদিন মনে তার দোল দেয়।

আঁকগুলো মাথা থাকে ঘোলাতে,

নন্দ ছুটেছে হাটখোলাতে।

হাটখোলা শ্বশুরের গদি তার--

সেইখানে বাসা মেলে যদি তার

এক সংখ্যায় মন দেবে ঝাঁপ,

তার চেয়ে বেশি হলে হবে পাপ।

আর নয়, আর নয়, আর নয়--

কখনোই দুই তিন চার নয়

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •