২ (kodmagonj ujar kore)


কদমাগঞ্জ উজাড় করে

             আসছিল মাল মালদহে,

চড়ায় পড়ে নৌকোডুবি

             হল যখন কালদহে,

তলিয়ে গেল অগাধ জলে

             বস্তা বস্তা কদমা যে

পাঁচ মোহনার কৎলু ঘাটে

             ব্রহ্মপুত্র নদ-মাঝে।

আসামেতে সদ্‌কি জেলায়

             হাংলু-ফিড়াঙ পর্বতের

তলায় তলায় ক'দিন ধরে

             বইল ধারা সর্বতের।

মাছ এল সব কাৎলাপাড়া

             খয়রাহাটি ঝেঁটিয়ে,

মোটা মোটা চিংড়ি ওঠে

             পাঁকের তলা ঘেঁটিয়ে।

চিনির পানা খেয়ে খুশি

             ডিগবাজি খায় কাৎলা,

চাঁদামাছের সরু জঠর

             রইল না আর পাতলা।

শেষে দেখি ইলিশমাছের

             জলপানে আর রুচি নাই,

চিতলমাছের মুখটা দেখেই

             প্রশ্ন তারে পুছি নাই।

ননদকে ভাজ বললে, তুমি

             মিথ্যা এ মাছ কোটো ভাই,

রাঁধতে গিয়ে দেখি এ যে

             মিঠাই-গজার ছোটোভাই।

মেছোনিকে গিন্নি বলেন,

             ঝুড়ির ঢাকা খুলো না,

মাছের রাজ্যে কোথাও যে নেই

             এ মৌরলার তুলনা।

বাগীশকে কাল শুধিয়েছিলেম,

             ব্রহ্মা কি কাজ ভুলল,

বিধাতা কি শেষবয়সে

             ময়রাদোকান খুলল।

যতীন ভায়ার মনে জাগে

             ক্রমবিকাশ থিয়োরি,

গল্‌ব্ল্যাডারে ক্রমে ক্রমে

             চিনি জমছে কি ওরই।

খগেন বলে, মাছের মধ্যে

             মাধুর্য নয় পথ্যাচার--

চচ্চড়িতে মোরব্বাতে

             একাত্মবাদ অত্যাচার।

বেদান্তী কয়, রসনাতে

             রসের অভেদ গলতি,

এমন হলে রাজ্যে হবে

             নিরামিষের চলতি।

ডাক পড়েছে অধ্যাপকের

             জামাইষষ্ঠী পার্বণে--

খাওয়ায় তাকে যত্ন করে

             শাশুড়ি আর চার বোনে।

মাছের মুড়ো মুখে দিয়েই

             উঠল জেগে বকুনি,

হাত নেড়ে সে তত্ত্বকথা

             করলে শুরু তখুনি--

কলিযুগের নিমক খেয়ে

             আমরা মানুষ সকলেই,

হঠাৎ বিষম সাধু হয়ে

             সত্যযুগের নকলেই

সব জাতেরই নিমকি থেকে

             নিমক যদি হটিয়ে দেয়,

সকল ভাঁড়েই চিনির পানার

             জয়ধ্বনি রটিয়ে দেয়,

চিনির বলদ জোড়ে এসে

             সকল মিটিং-কমিটি,

চোখের জলেই নোন্‌তা হবে

             বাংলাদেশের জমিটি।

নোনার স্থানে থাকবে নোনা,

             মিঠের স্থানে মিষ্টি--

সাহিত্যে বা পাকশালাতে

             এরেই বলে কৃষ্টি।

চিনি সে তো বার-মহলের,

             রক্তে বসত নোন্‌তার--

দোকানে প্রাণ মিষ্টি খোঁজে,

             নুন যে আপন ধন তার।

সাগরবাসের আদিম উৎস

             চোখের জলে খুলিয়ে দেয়,

নির্বাসনের দুঃখটা তার

             আখের খেতে ভুলিয়ে দেয়।

অতএব এই-- কী পাগলামি,

             কলম উঠল খেপে,

মিথ্যে বকা দৌড় দিয়েছে

             মিলের স্কন্ধে চেপে।

কবির মাথা ঘুলিয়ে গেছে

             বৈশাখের এই রোদে,

চোখের সামনে দেখছে কেবল

             মাছের ডিমের বোঁদে।

ঠাণ্ডা মাথায় ঘুচুক এবার

             রসের অনাবৃষ্টি,

উলটোপালটা না হয় যেন

             নোন্‌তা এবং মিষ্টি।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •