উদয়ন [শান্তিনিকেতন], ৫ জানুয়াররি, ১৯৪১


 

ছড়া (chhora)


অলস মনের আকাশেতে

          প্রদোষ যখন নামে,

কর্মরথের ঘড়্‌ঘড়ানি

          যে-মুহূর্তে থামে,

এলোমেলো ছিন্নচেতন

          টুকরো কথার ঝাঁক

জানি নে কোন্‌ স্বপ্নরাজের

          শুনতে যে পায় ডাক,

ছেড়ে আসে কোথা থেকে

          দিনের বেলার গর্ত--

কারো আছে ভাবের আভাস

          কারো বা নেই অর্থ--

ঘোলা মনের এই যে সৃষ্টি,

          আপন অনিয়মে

ঝিঁঝির ডাকে অকারণের

          আসর তাহার জমে।

একটুখানি দীপের আলো

          শিখা যখন কাঁপায়

চার দিকে তার হঠাৎ এসে

          কথার ফড়িং ঝাঁপায়।

পষ্ট আলোর সৃষ্টি-পানে

          যখন চেয়ে দেখি

মনের মধ্যে সন্দেহ হয়

          হঠাৎ মাতন এ কি।

বাইরে থেকে দেখি একটা

          নিয়ম-ঘেরা মানে,

ভিতরে তার রহস্য কী

          কেউ তা নাহি জানে।

খেয়াল-স্রোতের ধারায় কী সব

          ডুবছে এবং ভাসছে--

ওরা কী-যে দেয় না জবাব,

          কোথা থেকে আসছে।

আছে ওরা এই তো জানি,

          বাকিটা সব আঁধার--

চলছে খেলা একের সঙ্গে

          আর-একটাকে বাঁধার।

বাঁধনটাকেই অর্থ বলি,

          বাঁধন ছিঁড়লে তারা

কেবল পাগল বস্তুর দল

          শূন্যেতে দিক্‌হারা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •