শান্তিনিকেতন, ২৬ এপ্রিল ১৯৩৭


 

    ভাগীরথী (bhagirothi)


পূর্বযুগে, ভাগীরথী, তোমার চরণে দিল আনি

                             মর্তের ক্রন্দনবাণী;

                   সঞ্জীবনীতপস্যায় ভগীরথ

                             উত্তরিল দুর্গম পর্বত,

নিয়ে গেল তোমা-কাছে মৃত্যুবন্দী প্রেতের আহ্বান--

                   ডাক দিল, আনো আনো প্রাণ--

          নিবেদিল, হে চৈতন্যস্বরূপিণী তুমি,

                             গৈরিক অঞ্চল তব চুমি

          তৃণে শষ্পে রোমাঞ্চিত হোক মরুতল,

                             ফলহীনে দাও ফল,

          পুষ্পবন্ধ্যালতিকার ঘুচাও ব্যর্থতা,

                   নির্বাক্‌ ভূমির মুখে দাও কথা।

                             তুমি যে প্রাণের ছবি,

                                      হে জাহ্নবী--

          ধরণীর আদিসুপ্তি ভেঙে দিয়ে যেথা যাও চলে

                             জাগ্রত কল্লোলে

          গানে মুখরিয়া উঠে মাটির প্রাঙ্গণ,

                   দুই তীরে জেগে ওঠে বন;

          তট বেয়ে মাথা তোলে নগরনগরী

জীবনের আয়োজনে ভাণ্ডার ঐশ্বর্যে ভরি ভরি।

                   মানুষের মুখ্যভয় মৃত্যুভয়,

                             কেমনে করিবে তারে জয়

                                      নাহি জানে;

                   তাই সে হেরিছে ধ্যানে,

                             মৃত্যুবিজয়ীর জটা হতে

                                      অক্ষয় অমৃতস্রোতে

                                                প্রতিক্ষণে নামিছ ধরায়।

পুণ্যতীর্থতটে সে যে তোমার প্রসাদ পেতে চায়।

          সে ডাকিছে-- মিথ্যাশঙ্কা-নাগপাশে ঘুচাও ঘুচাও,

মরণেরে যে কালিমা লেপিয়াছি সে তুমি মুছাও;

                   গম্ভীর অভয়মূর্তি মরণের

          তব কলধ্বনিমাঝে গান ঢেলে দিক তরণের

                   এ জন্মের শেষ ঘাটে;

                             নিরুদ্দেশ যাত্রীর ললাটে

                                      স্পর্শ দিক আশীর্বাদ তব,

          নিক সে নূতন পথে যাত্রার পাথেয় অভিনব;

                   শেষ দণ্ডে ভরে দিক তার কান

অজানা সমুদ্রপথে তব নিত্য-অভিসার-গান।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •