শান্তিনিকেতন, ১ জুন, ১৯৩৬


 

হারানো মন (harano mon)


       দাঁড়িয়ে আছ আড়ালে,

           ঘরে আসবে কিনা ভাবছ সেই কথা।

                একবার একটু শুনেছি চুড়ির শব্দ।

       তোমার ফিকে পাটকিলে রঙের আঁচলের একটুখানি

                দেখা যায় উড়ছে বাতাসে

                          দরজার বাইরে।

                   তোমাকে দেখতে পাচ্ছি নে,

                       দেখছি পশ্চিম আকাশের রোদ্দুর

                   চুরি করেছে তোমার ছায়া,

              ফেলে রেখেছে আমার ঘরের মেঝের 'পরে।

       দেখছি শাড়ির কালো পাড়ের নীচে থেকে

           তোমার কনক-গৌরবর্ণ পায়ের দ্বিধা

                          ঘরের চৌকাঠের উপর।

                     আজ ডাকব না তোমাকে।

                আজ ছড়িয়ে পড়েছে আমার হালকা চেতনা--

                   যেন কৃষ্ণপক্ষের গভীর আকাশে নীহারিকা,

                     যেন বর্ষণশেষে মিলিয়ে-আসা সাদা মেঘ

                             শরতের নীলিমায়।

       আমার ভালোবাসা

         যেন সেই আল-ভেঙে-যাওয়া খেতের মতো

           অনেক দিন হল চাষি যাকে

                ফেলে দিয়ে গেছে চলে;

              আনমনা আদিপ্রকৃতি

                তার উপরে বিছিয়েছে আপন স্বত্ব

                           নিজের অজানিতে।

                তাকে ছেয়ে উঠেছে ঘাস,

উঠেছে অনামা গাছের চারা

                     সে মিলে গেছে চার দিকের বনের সঙ্গে

                       সে যেন শেষরাত্রির শুকতারা,

                          প্রভাত-আলোয় ডুবিয়ে দিল

                            তার আপন আলোর ঘটখানি।

         আজ কোনো-সীমানা-দেওয়া নয় আমার মন,

                হয়তো তাই ভুল বুঝবে আমাকে।

              আগেকার চিহ্নগুলো সব গেছে মুছে,

         আমাকে এক করে নিতে পারবে না কোনোখানে

                          কোনো বাঁধনে বেঁধে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •