শান্তিনিকেতন, পৌষ, ১৩৪৪


 

সতেরো (juddher damama uthlo beje)


          যুদ্ধের দামামা উঠল বেজে।

ওদের ঘাড় হল বাঁকা, চোখ হল রাঙা,

          কিড়্‌মিড়্‌ করতে লাগল দাঁত।

মানুষের কাঁচা মাংসে যমের ভোজ ভর্তি করতে

                     বেরোল দলে দলে।

সবার আগে চলল দয়াময় বুদ্ধের মন্দিরে

                      তাঁর পবিত্র আর্শীবাদের আশায়।

            বেজে উঠল তূরী ভেরি গরগর শব্দে,

                     কেঁপে উঠল পৃথিবী।

 

         ধূপ জ্বলল, ঘণ্টা বাজল, প্রার্থনার রব উঠল আকাশে

                   "করুণাময়,সফল হয় যেন কামনা'--

কেননা, ওরা যে জাগাবে মর্মভেদী আর্তনাদ

                             অভ্রভেদ ক'রে,

          ছিঁড়ে ফেলবে ঘরে ঘরে ভালোবাসার বাঁধনসূত্র,

                   ধ্বজা তুলবে লুপ্ত পল্লীর ভস্মস্তূপে,

          দেবে ধুলোয় লুটিয়ে বিদ্যানিকেতন,

                   দেবে চুরমার করে সুন্দরের আসনপীঠ।

তাই তো চলেছে ওরা দয়াময় বুদ্ধের নিতে আশীর্বাদ।

          বেজে উঠলো তূরী ভেরি গরগর শব্দে,

                             কেঁপে উঠলো পৃথিবী।

 

ওরা হিসাব রাখবে মরে পড়ল কত মানুষ,

                             পঙ্গু হয়ে গেল কয়জনা।

তারি হাজার সংখ্যার তালে তালে

                   ঘা মারবে জয়ডঙ্কায়।

পিশাচের অট্টহাসি জাগিয়ে তুলবে

শিশু আর নারীদেহের ছেঁড়া টুকরোর ছড়াছড়িতে।

ওদের এই মাত্র নিবেদন, যেন বিশ্বজনের কানে পারে

                                  মিথ্যামন্ত্র দিতে,

    যেন বিষ পারে মিশিয়ে দিতে নিশ্বাসে।

সেই আশায় চলেছে ওরা দয়াময় বুদ্ধের মন্দিরে

                          নিতে তাঁর প্রসন্ন মুখের আশীর্বাদ।

                বেজে উঠছে তূরী ভেরি গরগর শব্দে,

                                   কেঁপে উঠছে  পৃথিবী।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •