বাইশ (shurhu hotei o amar)


শুরু হতেই ও আমার সঙ্গ ধরেছে,

ঐ একটা অনেক কালের বুড়ো,

আমাতে মিশিয়ে আছে এক হয়ে।

আজ আমি ওকে জানাচ্ছি--

পৃথক হব আমরা।

ও এসেছে কতলক্ষ পূর্বপুরুষের

রক্তের প্রবাহ বেয়ে;

কত যুগের ক্ষুধা ওর, কত তৃষ্ণা;

সে সব বেদনা বহু দিনরাত্রিকে মথিত করেছে

সুদীর্ঘ ধারাবাহী অতীতকালে;

তাই নিয়ে ও অধিকার ক'রে বসল

নবজাত প্রাণের এই বাহনকে,

ঐ প্রাচীন, ঐ কাঙাল।

আকাশবাণী আসে ঊর্ধ্বলোক হতে,

ওর কোলাহলে সে যায় আবিল হয়ে।

নৈবেদ্য সাজাই পূজার থালায়,

ও হাত বাড়িয়ে নেয় নিজে।

জীর্ণ করে ওকে দিনে দিনে পলে পলে,

বাসনার দহনে,

ওর জরা দিয়ে আচ্ছন্ন করে আমাকে

যে-আমি জরাহীন।

মুহূর্তে মুহূর্তে ও জিতে নিয়েছে আমার মমতা,

তাই ওকে যখন মরণে ধরে

ভয় লাগে আমার

যে-আমি মৃত্যুহীন।

আমি আজ পৃথক হব।

ও থাক্‌ ঐ খানে দ্বারের বাহিরে,

ঐ বৃদ্ধ, ঐ বুভুক্ষু।

ও ভিক্ষা করুক, ভোগ করুক,

তালি দিক্‌ বসে বসে

ওর ছেঁড়া চাদরখানাতে;

জন্মমরণের মাঝখানটাতে

যে আল-বাঁধা খেতটুকু আছে

সেইখানে করুক উঞ্ছবৃত্তি।

আমি দেখব ওকে জানলায় ব'সে,

ঐ দূরপথের পথিককে,

দীর্ঘকাল ধরে যে এসেছে

বহু দেহমনের নানা পথের বাঁকে বাঁকে

মৃত্যুর নানা খেয়া পার হয়ে।

উপরের তলায় বসে দেখব ওকে

ওর নানা খেয়ালের আবেশে,

আশা-নৈরাশ্যের ওঠা-পড়ায় সুখদুঃখের আলো-আঁধারে।

দেখব যেমন করে পুতুলনাচ দেখে;

হাসব মনে মনে।

মুক্ত আমি, স্বচ্ছ আমি, স্বতন্ত্র আমি,

নিত্যকালের আলো আমি,

সৃষ্টি-উৎসের আনন্দধারা আমি,

অকিঞ্চন আমি,

আমার কোনো কিছুই নেই

অহংকারের প্রাচীরে ঘেরা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •