১ আশ্বিন, ১৩৩৯


 

পয়লা আশ্বিন (poyla ashwin)


হিমের শিহর লেগেছে আজ মৃদু হাওয়ায়

           আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

    ভোরবেলাকার চাঁদের আলো

           মিলিয়ে আসে শ্বেতকরবীর রঙে।

শিউলিফুলের নিশ্বাস বয়

        ভিজে ঘাসের 'পরে,

    তপস্বিনী উষার পরা পুজোর চেলির

           গন্ধ যেন

               আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

 

পুব আকাশে শুভ্র আলোর শঙ্খ বাজে--

    বুকের মধ্যে শব্দ যে তার

        রক্তে লাগায় দোলা।

    কত যুগের কত দেশের বিশ্ববিজয়ী

           মৃত্যুপথে ছুটেছিল

               অমর প্রাণের অসাধ্য সন্ধানে।

    তাদেরই সেই বিজয়শঙ্খ

           রেখে গেছে অরব ধ্বনি

               শিশির-ধোওয়া রোদে।

        বাজল রে আজ বাজল রে তার

                   ঘর-ছাড়ানো ডাক

               আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

 

ধনের বোঝা, খ্যাতির বোঝা, দুর্ভাবনার বোঝা

           ধুলোয় ফেলে দিয়ে

        নিরুদ্‌বেগে চলেছিল জটিল সংকটে।

           ললাট তাদের লক্ষ্য ক'রে

               পঙ্কপিণ্ড হেনেছিল

           দুর্জনেরা মলিন হাতে;

        নেমেছিল উল্কা আকাশ থেকে,

           পায়ের তলায় নীরস নিঠুর পথ

        তুলেছিল গুপ্ত ক্ষুদ্র কুটিল কাঁটা।

    পায় নি আরাম, পায় নি বিরাম,

           চায় নি পিছন ফিরে;

        তাদেরই সেই শুভ্রকেতনগুলি

               ওই উড়েছে শরৎপ্রাতের মেঘে

                   আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

 

ভয় কোরো না, লোভ কোরো না, ক্ষোভ কোরো না,

               জাগো আমার মন--

        গান জাগিয়ে চলো সমুখ-পথে

    যেখানে ওই কাশের চামর দোলে

           নবসূর্যোদয়ের দিকে।

               নৈরাশ্যের নখর হতে

    রক্ত-ঝরা আপ্‌নাকে আজ ছিন্ন করে আনো

আশার মোহ-শিকড়গুলো উপড়ে দিয়ে যাও--

           লালসাকে দলো পায়ের তলায়।

    মৃত্যুতোরণ যখন হবে পার

পরাজয়ের গ্লানিভরে মাথা তোমার না হয় যেন নত।

        ইতিহাসের আত্মজয়ী বিশ্ববিজয়ী

    তাদের মাভৈঃ বাণী বাজে নীরব নির্ঘোষণে

               নির্মল এই শরৎ-রৌদ্রালোকে

                       আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •