১৭ ভাদ্র, ১৩৩৯


 

ছুটির আয়োজন (chhutir ayojan)


কাছে এল পূজার ছুটি।

    রোদ্‌দুরে লেগেছে চাঁপাফুলের রঙ।

        হাওয়া উঠছে শিশিরে শির্‌শিরিয়ে,

           শিউলির গন্ধ এসে লাগে

    যেন কার ঠাণ্ডা হাতের কোমল সেবা।

           আকাশের কোণে কোণে

               সাদা মেঘের আলস্য,

                   দেখে মন লাগে না কাজে।

 

মাস্টারমশায় পড়িয়ে চলেন

        পাথুরে কয়লার আদিম কথা,

    ছেলেটা বেঞ্চিতে পা দোলায়,

        ছবি দেখে আপন মনে--

    কমলদিঘির ফাটল-ধরা ঘাট

        আর ভঞ্জদের পাঁচিল-ঘেঁষা

           আতাগাছের ফলে-ভরা ডাল।

আর দেখে সে মনে মনে তিসির খেতে

        গোয়ালপাড়ার ভিতর দিয়ে

           রাস্তা গেছে এঁকেবেঁকে হাটের পাশে

               নদীর ধারে।

 

কলেজের ইকনমিক্‌স্‌-ক্লাসে

        খাতায় ফর্দ নিচ্ছে টুকে

চশমা-চোখে মেডেল-পাওয়া ছাত্র--

        হালের লেখা কোন্‌ উপন্যাস কিনতে হবে,

           ধারে মিলবে কোন্‌ দোকানে

"মনে-রেখো' পাড়ের শাড়ি,

        সোনায় জড়ানো শাঁখা,

               দিল্লির-কাজ-করা লাল মখমলের চটি।

    আর চাই রেশমে-বাঁধাই-করা

           অ্যাণ্টিক কাগজে ছাপা কবিতার বই,

                   এখনো তার নাম মনে পড়ছে না।

 

    ভবানীপুরের তেতালা বাড়িতে

        আলাপ চলছে সরু মোটা গলায়--

           এবার আবুপাহাড় না মাদুরা

               না ড্যাল্‌হৌসি কিম্বা পুরী

        না সেই চিরকেলে চেনা লোকের দার্জিলিঙ।

    আর দেখছি সামনে দিয়ে

স্টেশনে যাবার রাঙা রাস্তায়

        শহরের-দাদন-দেওয়া দড়িবাঁধা ছাগল-ছানা

           পাঁচটা ছটা ক'রে।

        তাদের নিষ্ফল কান্নার স্বর ছড়িয়ে পড়ে

    কাশের-ঝালর-দোলা শরতের শান্ত আকাশে।

           কেমন ক'রে বুঝেছে তারা

                   এল তাদের পূজার ছুটির দিন।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •