বোলপুর, ৭ আষাঢ়, ১৩১৩


 

বর্ষাপ্রভাত (borshaprobhat)


ওগো,  এমন সোনার মায়াখানি

              কে যে গড়েছে!

         মেঘ টুটে আজ প্রভাত-আলো

              ফুটে পড়েছে।

         বাতাস কাহার সোহাগ মাগে,

         গাছে-পালায় চমক লাগে,

         হৃদয় আমার বিভাস রাগে

              কী গান ধরেছে!

 

আজ    বিশ্বদেবীর দ্বারের কাছে

              কোন্‌ সে ভিখারী

         ভোরের বেলা দাঁড়িয়েছিল

              দু হাত বিথারি--

         আঁজল ভরে সোনা দিতে

         ছাপিয়ে পড়ে চারি ভিতে,

         লুটিয়ে গেল পৃথিবীতে,

              এ কী নেহারি!

 

ওগো,  পারিজাতের কুঞ্জবনে

              স্বর্গপুরীতে

         মৌমাছিরা লেগেছিল

              মধু-চুরিতে--

         আজ প্রভাতে একেবারে

         ভেঙেছে চাক সুধার ভারে,

         সোনার মধু লক্ষ ধারে

              লাগে ঝুরিতে।

 

আজ    সকাল হতেই খবর এল

              লক্ষ্মী একেলা

         অরুণরাগে পাতবে আসন

              প্রভাতবেলা--

         শুনে দিগ্বিদিকে টুটে

         আলোর পদ্ম উঠল ফুটে,

         বিশ্বহৃদয়মধুপ জুটে

              করেছে মেলা।

 

ওকি    সুরপুরীর পর্দাখানি

              নীরবে খুলে

         ইন্দ্রাণী আজ দাঁড়িয়ে আছেন

              জানালা-মূলে--

         কে জানে গো কী উল্লাসে

         হেরেন ধরা মধুর হাসে,

         আঁচলখানি নীলাকাশে

              পড়েছে দুলে।

 

ওগো,  কাহারে আজ জানাই আমি

              কী আছে ভাষা--

         আকাশপানে চেয়ে আমার

              মিটেছে আশা।

         হৃদয় আমার গেছে ভেসে

         চাই-নে-কিছু'র স্বর্গ-শেষে,

         ঘুচে গেছে এক নিমেষে

              সকল পিপাসা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •