বোলপুর, ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৩


 

গান শোনা (gan shona)


  আমার এ গান শুনবে তুমি যদি

       শোনাই কখন বলো।

  ভরা চোখের মতো যখন নদী

       করবে ছলছল,

  ঘনিয়ে যখন আসবে মেঘের ভার

       বহু কালের পরে,

  না যেতে দিন সজল অন্ধকার

       নামবে তোমার ঘরে,

  যখন তোমার কাজ কিছু নেই হাতে,

       তবুও বেলা আছে,

  সাথি তোমার আসত যারা রাতে

       আসে নি কেউ কাছে,

  তখন আমায় মনে পড়ে যদি

       গাইতে যদি বল--

  নবমেঘের ছায়ায় যখন নদী

       করবে ছলছল।

 

  ম্লান আলোয় দখিন-বাতায়নে

       বসবে তুমি একা--

  আমি গাব বসে ঘরের কোণে,

       যাবে না মুখ দেখা।

ফুরাবে দিন, আঁধার ঘন হবে,

       বৃষ্টি হবে শুরু--

  উঠবে বেজে মৃদুগভীর রবে

       মেঘের গুরুগুরু।

  ভিজে পাতার গন্ধ আসবে ঘরে,

       ভিজে মাটির বাস--

  মিলিয়ে যাবে বৃষ্টির ঝর্ঝরে

       বনের নিশ্বাস।

  বাদল-সাঁঝে আঁধার বাতায়নে

       বসবে তুমি একা--

  আমি গেয়ে যাব আপন-মনে,

       যাবে না মুখ দেখা।

 

  জলের ধারা ঝরবে দ্বিগুণ বেগে,

       বাড়বে অন্ধকার--

  নদীর ধারে বনের সঙ্গে মেঘে

       ভেদ রবে না আর।

  কাঁসর ঘণ্টা দূরে দেউল হতে

       জলের শব্দে মিশে

  আঁধার পথে ঝোড়ো হাওয়ার স্রোতে

       ফিরবে দিশে দিশে।

  শিরীষফুলের গন্ধ থেকে থেকে

       আসবে জলের ছাঁটে,

  উচ্চরবে পাইক যাবে হেঁকে

       গ্রামের শূন্য বাটে।

  জলের ধারা ঝরবে বাঁশের বনে,

       বাড়বে অন্ধকার--

  গানের সাথে বাদলা রাতের সনে

       ভেদ রবে না আর।

 

ও ঘর হতে যবে প্রদীপ জ্বেলে

         আনবে আচম্বিত

  সেতারখানি মাটির 'পরে ফেলে

         থামাব মোর গীত।

  হঠাৎ যদি মুখ ফিরিয়ে তবে

         চাহ আমার পানে

  এক নিমিষে হয়তো বুঝে লবে

         কী আছে মোর গানে।

  নামায়ে মুখ নয়ন করে নিচু

         বাহির হয়ে যাব,

  একলা ঘরে যদি কোনো-কিছু

         আপন-মনে ভাব।

  থামিয়ে গান আমি চলে গেলে

         যদি আচম্বিত

  বাদল-রাতে আঁধারে চোখ মেলে

         শোন আমার গীত।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •