ভাদ্র ১২৯২ 


 

অভ্যর্থনা (obhyorthona)

প্রথম দৃশ্য

গ্রামের পথ
চতুর্ভুজবাবু এম| এ| পাস করিয়া গ্রামে আসিয়াছেন; মনে করিয়াছেন গ্রামে হুলস্থূল পড়িবে।
সঙ্গে একটা মোটাসোটা কাবুলি বিড়াল আছে
নীলরতনের প্রবেশ
নীলরতন।
এই যে চতুবাবু, কবে আসা হল?
চতুর্ভুজ।
কালেজে এম| এ| এক্‌জামিন দিয়েই--
নীলরতন।
বা বা, এ বেড়ালটি তো বড়ো সরেস।
চতুর্ভুজ।
এবারকার এক্‌জামিনেশন ভারি--
নীলরতন।
মশায়, বেড়ালটি কোথায় পেলেন?
চতুর্ভুজ।
কিনেছি। এবারে যে সবজেক্ট নিয়েছিলুম--
নীলরতন।
কত দাম লেগেছে মশায়?
চতুর্ভুজ।
মনে নেই। নীলরতনবাবু, আমাদের গ্রামের থেকে কেউ কি পাস হয়েছে?
নীলরতন।
বিস্তর। কিন্তু এমন বেড়াল এ মুল্লুকে নেই।
চতুর্ভুজ।
(স্বগত) আ মোলো, এ যে কেবল বেড়ালের কথাই বলে-- আমি যে পাস করে এলুম সে কথা যে আর তোলে না।
জমিদারবাবুর প্রবেশ
জমিদার।
এই-যে চতুর্ভুজ, এতকাল কলকাতায় বসে কী করলে বাপু?
চতুর্ভুজ।
আজ্ঞে এম| এ| দিয়ে আসছি।
জমিদার।
কী বললে? মেয়ে দিয়ে এসেছ? কাকে দিয়ে এসেছ?
চতুর্ভুজ।
তা নয়-- বি| এ| দিয়ে--
জমিদার।
মেয়ের বিয়ে দিয়েছ? তা, আমরা কিছুই জানতে পারলেম না?
চতুর্ভুজ।
বিয়ে নয়-- বি|এ|--
জমিদার।
তবেই হল। তোমরা শহরে বল বি|এ| , আমরা পাড়াগাঁয়ে বলি বিয়ে। সে কথা যাক, এ বেড়ালটি তোফা দেখতে।
চতুর্ভুজ।
আপনার ভ্রম হয়েছে; আমার--
জমিদার।
ভ্রম কিসের-- এমন বেড়াল তুমি এ জেলার মধ্যে খুঁজে বের করো দেখি!
চতুর্ভুজ।
আজ্ঞে না, বেড়ালের কথা হচ্ছে না--
জমিদার।
বেড়ালের কথাই তো হচ্ছে-- আমি বলছি এমন বেড়াল মেলে না।
চতুর্ভুজ।
(স্বগত) আ খেলে যা!
জমিদার।
বিকেলের দিকে বেড়ালটি সঙ্গে করে আমাদের ও দিকে একবার যেয়ো। ছেলেরা দেখে ভারি খুশি হবে।
চতুর্ভুজ।
তা হবে বৈকি। ছেলেরা অনেক দিন আমাকে দেখে নি।
জমিদার।
হাঁ-- তা তো বটেই-- কিন্তু আমি বলছি, তুমি যদি যেতে না পার তো বেড়ালটি বেণীর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ো-- ছেলেদের দেখাব।
[ উভয়ের প্রস্থান ]
সাতুখুড়োর প্রবেশ
সাতুখুড়ো।
এই-যে, অনেক দিনের পর দেখা।
চতুর্ভুজ।
তা আর হবে না! কতগুলো এক্‌জামিন--
সাতুখুড়ো।
এই বেড়ালটি--
চতুর্ভুজ।
(সরোষে) আমি বাড়ি চললেম। [ প্রস্থানোদ্যম
সাতুখুড়ো।
আরে, শুনে যাও-না-- এ বেড়ালটি--
চতুর্ভুজ।
না মশায়, বাড়িতে কাজ আছে।
সাতুখুড়ো।
আরে, একটা কথার উত্তরই দাও-না -- এ বেড়ালটি--
[ উভয়ের প্রস্থান ]
সাতুখুড়ো।
আ মোলো! ছেলেপুলেগুলো লেখাপড়া শিখে ধনুর্ধর হয়ে ওঠেন। গুণ তো যথেষ্ট-- অহংকার চার পোয়া!
[ উভয়ের প্রস্থান ]

দ্বিতীয় দৃশ্য

চতুর্ভুজের বাটীর অন্তঃপুর
দাসী।
মাঠাকরুন, দাদাবাবু একেবারে আগুন হয়ে এসেছেন।
মা।
কেন রে?
দাসী।
কী জানি বাপু!
চতুর্ভুজের প্রবেশ
ছোটো ছেলে।
দাদাবাবু, এ বেড়ালটি আমাকে--
চতুর্ভুজ।
(তাহাকে এক চপেটাঘাত) দিন রাত্রি কেবল বেড়াল বেড়াল বেড়াল!
মা।
বাছা সাধে রাগ করে! এত দিন পরে বাড়ি এল, ছেলেগুলি বিরক্ত করে খেলে। যা, তোরা সব যা! (চতুর্ভুজের প্রতি) আমাকে দাও বাছা-- দুধভাত রেখে দিয়েছি, আমি তোমার বেড়ালকে খাইয়ে আনছি।
চতুর্ভুজ।
(সরোষে) এই নাও মা, তোমরা বেড়ালকেই খাওয়াও আমি খাব না, আমি চললেম।
মা।
(সকাতরে) ও কী কথা! তোমার খাবার তো তৈরি আছে বাপ, এখন নেয়ে এলেই হয়।
চতুর্ভুজ।
আমি চললেম-- তোমাদের দেশে বেড়ালেরই আদর, এখানে গুণবানের আদর নেই।
বিড়ালের প্রতি লাথি-বর্ষণ
মাসিমা।
আহা, ওকে মেরো না-- ও তো কোনো দোষ করে নি।
চতুর্ভুজ।
বেড়ালের প্রতিই যত তোমাদের মায়ামমতা-- আর মানুষের প্রতি একটু দয়া নেই।
[ উভয়ের প্রস্থান ]
ছোটো মেয়ে।
(নেপথ্যের দিকে নির্দেশ করিয়া) হরিখুড়ো দেখে যাও, ওর লেজ কত মোটা।
হরি।
কার?
মেয়ে।
ঐ-যে ওর!
হরি।
চতুর্ভুজের?
মেয়ে।
না, ঐ বেড়ালের।

তৃতীয় দৃশ্য

পথ। ব্যাগ হস্তে চতুর্ভুজ। সঙ্গে বিড়াল নাই
সাধুচরণ।
মশায়, আপনার সে বেড়ালটি গেল কোথায়?
চতুর্ভুজ।
সে মরেছে!
সাধুচরণ।
আহা, কেমন করে মোলো?
চতুর্ভুজ।
(বিরক্ত হইয়া) জানি নে মশায়!
পরানবাবুর প্রবেশ
পরান।
মশায়, আপনার বেড়াল কী হল?
চতুর্ভুজ।
সে মরেছে।
পরান।
বটে! মোলো কী করে?
চতুর্ভুজ।
এই তোমরা যেমন করে মরবে। গলায় দড়ি দিয়ে।
পরান।
ও বাবা, এ যে একেবারে আগুন।
চতুর্ভুজের পশ্চাতে ছেলের পাল লাগিল
হাততালি দিয়া 'কাবুলি বিড়াল' 'কাবুলি বিড়াল' বলিয়া খেপাইতে লাগিল
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •