ছত্রিশ (shiter roddur)

শীতের রোদ্দুর।

সোনা-মেশা সবুজের ঢেউ

স্তম্ভিত হয়ে আছে সেগুন বনে।

বেগনি-ছায়ার ছোঁওয়া-লাগা

ঝুরি-নামা বৃদ্ধ বট

ডাল মেলেছে রাস্তার ওপার পর্যন্ত।

ফলসাগাছের ঝরা পাতা

হঠাৎ হাওয়ায় চমকে বেড়ায় উড়ে

ধুলোর সাঙাত হয়ে।

কাজ-ভোলা এই দিন

উধাও বলাকার মতো

লীন হয়ে চলেছে নিঃসীম নীলিমায়।

ঝাউগাছের মর্মরধ্বনিতে মিশে

মনের মধ্যে এই কথাটি উঠছে বেজে,

"আমি আছি।"

কুয়োতলার কাছে

সামান্য ঐ আমের গাছ;

সারা বছর ও  থাকে আত্মবিস্মৃত,

বনের সাধারণ সবুজের আবরণে

ও থাকে ঢাকা।

এমন সময় মাঘের শেষে

হঠাৎ মাটির নিচে

শিকড়ে শিকড়ে তার শিহর লাগে,

শাখায় শাখায় মুকুলিত হয়ে ওঠে বাণী--

"আমি আছি,"

চন্দ্রসূর্যের আলো আপন ভাষায়

স্বীকার করে তার সেই ভাষা।

অলস মনের শিয়রে দাঁড়িয়ে

হাসেন অন্তর্যামী,

হঠাৎ দেন ঠেকিয়ে সোনার কাঠি

প্রিয়ার মুগ্ধ চোখের দৃষ্টি দিয়ে,

কবির গানের সুর দিয়ে,

তখন যে-আমি ধূলিধূসর সামান্য দিনগুলির

মধ্যে মিলিয়ে ছিল,

সে দেখা দেয় এক নিমেষের অসমান্য আলোকে।

সে-সব দুর্মূল্য নিমেষ

কোনো রত্নভাণ্ডারে থেকে যায় কি না জানিনে;

এইটুকু জানি--

তারা এসেছে আমার আত্মবিস্মৃতির মধ্যে,

জাগিয়েছে আমার মর্মে

বিশ্বমর্মের নিত্যকালের সেই বাণী

"আমি আছি।"

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Rendition

Please Login first to submit a rendition. Click here for help.