১৩ মার্চ, ১৯৩১


 

চিঠিপত্র (chithipotro 4)

শ্রীপ্যারীমোহন সেনগুপ্তকে লিখিত


সংস্কৃত কাব্য-অনুবাদ সম্বন্ধে আমার মত এই যে, কাব্যধ্বনিময় গদ্যে ছাড়া বাংলা পদ্যচ্ছন্দে তার গাম্ভীর্য ও রস রক্ষা করা সহজ নয়। দুটি-চারটি শ্লোক কোনোমতে বানানো যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ কাব্যের অনুবাদকে সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য করা দুঃসাধ্য। নিতান্ত সরল পয়ারে তার অর্থটিকে প্রাঞ্জল করা যেতে পারে। কিন্ত, তাতে ধ্বনিসংগীত মারা যায়, অথচ সংস্কৃত কাব্যে এই ধ্বনিসংগীত অর্থসংগীত অর্থসম্পদের চেয়ে বেশি বই কম নয়।

 

মন্দাক্রান্তা ছন্দের আলোচনা-প্রসঙ্গে প্রবোধ বাঙালির কানের উল্লেখ করেছেন। বাঙালির কান বলে কোনো বিশেষ পদার্থ আছে বলে আমি মানি নে। মানুষেরস্বাভাবিক কানের দাবি অনুসরণ করলে দেখা যায়, মন্দাক্রান্তা ছন্দের চার পর্ব।যথা --

 

মেঘালোকে। ভবতি সুখিনো । প্যন্যথাবৃৎ। তি চেতঃ।

 

 

অর্থাৎ, মাত্রা-হিসাবে আট + সাত + সাত +চার। শেষের চারকে ঠিক চার বলা চলে না। কারণ, লাইনের শেষে একমাত্রা আন্দাজের যতি বিরামের পক্ষে অনিবার্য। এই ছন্দকে বাংলায় আনতে গেলে এই রকম দাঁড়ায় --

 

দূরে ফেলে গেছ জানি,

       স্মৃতির বীণাখানি,

        বাজায় তব বাণী

            মধুরতম।

 

অনুপমা, জেনো অয়ি,

    বিরহ চিরজয়ী

     করেছে মধুময়ী

          বেদনা মম।

 

 

সংস্কৃতের অমিত্রাক্ষররীতি অনুবর্তন করা যেতে পারে । যথা --

 

      অভাগ্‌ যক্ষ কবে করিল কাজে হেলা, কুবের তাই তারে দিলেন শাপ,

      নির্বাসনে সে রহি প্রেয়সী-বিচ্ছেদে বর্ষ ভরি স'বে দারুণ জ্বালা।

      গেল চলি রামগিরি-শিখর-আশ্রমে হারায়ে সহজাত মহিমা তার,

      সেখানে পাদপরাজি স্নিগ্ধছায়াবৃত সীতার স্নানে পুত সলিলধারা॥

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •